বিশেষ প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা। নির্বাচনী কাজের সেই পালে যেন হাওয়া লেগেছে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটরদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রচারে নেমেছে দলের নেতাকর্মীরা। একই সাথে শুরু হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, তলে তলে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে বিএনপিও। দলের নেতাকর্মীদের সাথে সভা, জনসংযোগ করার পাশাপাশি কেউ কেউ পোস্টারও ছেপেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল, নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। এদিকে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, বিএনএফসহ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও এখন নির্বাচনমুখী।
আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় তিনি দলের নেতাদের পুরোদমে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। এসময় দলীয় সভানেত্রী তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। গত ১৫ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুৎখাতসহ দেশে যে সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে তা গ্রামপর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরা; বিএনপি মিথ্যার রাজনীতি করে, সেই মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যটা মানুষকে জানানো এবং আগামীতেও আওয়ামী লীগ কেন ক্ষমতায় আসতে চায়, কেন মানুষে আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে সে বিষয়টিও ব্যাপকভাবে প্রচার করতে নির্দশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস নেতাদেরকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় করেছে। তারা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসহ একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন। দলটির নির্বাচনী ইশতেহারও তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে, কর্মসংস্থান তৈরি, দেশকে আরো বেশি বিনিয়োগবান্ধব করে তোলাসহ নানান বিষয় তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘দেশের ফেরার পর দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কুশল বিনিময় করেছেন। এসময় নেত্রী কিছু নির্দশনাও দিয়েছেন। আমরা তৃণমূলের কাছে সেই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যতো বাধা বিপত্তি, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসুক না কেন, নির্বাচন যথাসময়ে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণেই অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি না আসলে তারা একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’
আওয়ামী লীগের সামনে এখন নির্বাচন ছাড়া আর কোনো ভাবনা নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মাঠ নির্বাচনী কার্যক্রম, প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনে ভোটরদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং দেশ পরিচালনার জন্য আবারও কেন আওয়ামী লীগকে দরকার সেটিও মানুষকে জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিকল্প এই মুহূর্তে আর কেউ নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়নে, বাংলাদেশকে উন্নয়নমীল রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যেতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি বিএনপির মিথ্যাচার, আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও ঠেকাতে দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে সক্রিয় থাকার নির্দেশনাও দিয়েছি। বিএনপি-জামায়াত জোটের অপকর্ম ঠেকাতে আমরা সব সময় রাজপথে আছি।’ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রেখে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললেও ভিতরে ভিতরে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বিএনপিও। দেশের অনেক সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টারও। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে রোড মার্চ, সভা-সমাবেশ করছে এর মধ্য দিয়ে দলটি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বিএনপি ভোটে অংশ নেবেনা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের মতো বর্তমান সরকারের অধীনে শেষ মুহূর্তে যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে তারও বিকল্প প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। বিএনপি যে কয়েকবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে সেটাও নির্বাচনের মাধ্যমেই। এখন বিএনপির চলমান আন্দোলন যেটাও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে।
এছাড়া জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, বিএনএফসহ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও এখন নির্বাচনমুখী। এসব দলের নেতাকর্মীরাও মাঠ পর্যায়ে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন।