নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর দলটির কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিয়ে গুজব ছড়ানো মার্কিন নাগরিক মিয়া আরেফি বর্তমানে কারাগারে। তাকে পথ দেখানো লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সারওয়ার্দীকেও গত ৩১ অক্টোবর বিকালে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করা হচ্ছে একের পর এক ষড়যন্ত্রের খবর।
জিজ্ঞাসাবাদ মিয়া আরেফি জানিয়েছেন, বিএনপির অফিসে বসে আরেফি যা যা বলেছে, তা তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই শিখিয়ে-পড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে সে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তার সঙ্গে ঘুরপথে রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংযোগ। জাস্ট নিউজের সম্পাদক, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে কর্মরত সাংবাদিক মুশফিকুর ফজল আনসারীর বন্ধু তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির মূল লবিস্ট হিসেবে মুশফিকুর মাসে ১০ হাজার ডলার বেতন পান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের কাছ থেকে।
বিএনপি আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে মুশফিকুর ফজল আনসারী। তার কাজ, বিএনপির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে, এমন কথা ছড়িয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মনে আশা জাগিয়ে রাখা। এই মুশফিক আনসারীই গত জুলাই মাসে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে ১৮ কংগ্রেসম্যানের চিঠি আনার পেছনে ২ লাখ ডলার খরচ করেছে বলেছে গোয়েন্দাদের জানিয়েছিন মিয়া আরিফ।
আরেফিকে ঢাকায় পাঠানোর আগে মুশফিক তাকে বুঝিয়েছিলো, ৩ নভেম্বর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। তারপর অন্তর্বতী সরকার গঠন হবে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জামায়াতে ইসলামির লোকজনের কাছে আরেফিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন মুশফিকুর ফজল আনসারী। আরেফি বাংলাদেশে তৎপরতা চালানোর সময় তার যাবতীয় ব্যয়ভার জামায়াতে ইসলামিকে বহনের অনুরোধ করে মুশফিকুর। জামায়াত ওই প্রস্তাব লুফে নেয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সারওয়ার্দীকে সামনে রেখে অন্তর্বতী সরকারের কাঠামোর দাঁড় করাতে তৎপর জামায়াতে ইসলামী। সেই সারওয়ার্দী এই দায়িত্ব নেন।
পুরো কাজটির জন্য তারেক রহমানের অনুমতি জোগাড় করে মুশফিক। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন ও ইশরাক হোসেনকে বার্তা দেন তারেক। ফলে বিএনপি অফিসে সহজে ঢুকতে পারে আরেফি আর সারওয়ার্দী। আরেফি ঢাকায় এসে সারওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম জামায়াত, হেফাজত এবং জামায়াত প্রতিষ্ঠিত ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে। সবাই মিলে অন্তর্বতী সরকারের রূপরেখাও দাঁড় করিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতা, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় গিয়ে আরেফি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দনয়। খোন্দকার মোশাররফকে তিনি জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই কেয়ারটেকার সরকার হচ্ছে। কারা এই সরকারে থাকবেন, জানতে চাইলে সারওয়ার্দী জানান, আন্দোলনরত দলগুলো থেকে দুইজন করে নেতা সেই সরকারে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিছু নামও ওই বৈঠকে তোলা হয়।
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হলে সারওয়ার্দী এবং আরেফি বিএনপি অফিসে গিয়ে হাই কমাণ্ডের নির্দেশ ও মুশফিকের অনুরোধে সংবাদ সম্মেলন করে। ভুয়া উপদেষ্টা আরেফির মিথ্যাচার ছড়িয়ে পড়লে মার্কিন দূতাবাস তার সত্য তথ্য জানিয়ে দেয়ার পর তাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর চেষ্টা করছিলেন আরেফি। আর সারওয়ার্দীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।