যমুনা বাংলা ওয়েব ডেস্কঃ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত নয়টার দিকে চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর মোহাম্মদ আবু মোহসিন খান (৫৮) ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর নিজ বাসায় এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ধানমণ্ডি থানার ডিউটি অফিসার এসআই আলমগীর হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লাইভের ১৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মাথায় তিনি আত্মহত্যা করেন। এ সময় তিনি নিজের লাইসেন্স করা বন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে গুলি চালান। পরে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে। তার আত্মহত্যা করার পরও লাইভ চলছিল। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই লাইভ চলমান থাকে।
আত্মহত্যার আগে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি আমাদের জীবনের কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলে গেছেন। তিনি তার জীবনের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলেন মহসিন।
লাইভে এসে মহসিন খান বলেন, আমি ঢাকায় থাকি, আমার বয়স ৫৮ বছর, কোনো একসময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। এখন আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আজকের লাইভে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানানো। এ অভিজ্ঞতা থেকে আপনারা হয়ত অনেক কিছু জানতে পারবেন, সাবধানতা অবলম্বন করবেন। গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। ওনার একটিমাত্র ছেলে, কিন্তু মা মারা যাওয়ার খবরে পেয়েও সে দেশে আসেনি। এ বিষয়টি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। আমার একটা ছেলে আছে, সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে, আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়ে থাকি, আমার মনে হয় না এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে–মেয়ে, স্ত্রী—যাদের জন্য যা–ই কিছু আমরা করি। আমরা সব কিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি এক শ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন; তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়। একা থাকা যে কী কষ্ট, তা যারা একা থাকেন তারাই জানেন। আমার আর পৃথিবীর প্রতি, পৃথিবীর মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা নেই। কারণ যাদের জন্য আমি বেশি করেছি, তাদের কাছ থেকেই আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল বাবুল, যাকে আমি নিজে না খেয়ে খাইয়েছি। সে আমার প্রায় ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে। এভাবে আমি বিভিন্ন মানুষের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো পাই। সবশেষ আমি নোবেল নামে একজনকে বিশ্বাস করি। যাকে আমি মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্টের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই বছরেও সেই প্ল্যান্টের যন্ত্র সে কেনেনি। পরে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে, ঝগড়া হয়। এরপর সে দুই দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা সে আমাকে দিচ্ছে না। মানুষ কেন এতো লোভী হয়?
ফেসবুক লাইভে মহসিন আরও বলেন, পিতামাতা যা উপার্জন করে তার সিংহভাগ সন্তানদের পেছনে খরচ করে। প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামেলিকে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামেলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন, তাদের সাথে এটাই শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন।
এরপর কালেমা পড়তে পড়তে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন তিনি। তার আগে পিস্তলের লাইসেন্স দেখান। বলেন, আমি যেটা দিয়ে আত্মহত্যা করছি সেটি ইলিগ্যাল কিছু না। এটির লাইসেন্স আছে। সেটি নবায়নও করা হয়েছে। আমি চলে যাবো। আত্মীয় স্বজন যারা আছো, যেহেতু বাবাও আমাকে জায়গাটা দেয়নি, আমি যে কবরস্থানটা করেছি সেখানে আমাকে দাফন করো না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি কবরস্থান হয়েছে, সেখানে তোমরা আমাকে দাফন করে দিও। প্রত্যেকটা লোক আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমার বাবা, মা, ভাইরা, প্রত্যেকটা লোক, এভরিওয়ান।
মহসিন চেয়ারে বসে ফেসবুক লাইভে কথা বলেন। তার সামনে টেবিল ছিল। ওই টেবিলে কাফনের কাপড় ছিল। এর ওপর একটি চিরকুট ছিল; তাতে লেখা আছে, এখানে কাফনের কাপড় রাখা আছে। যা আমি ওমরা হজে ব্যবহার করেছিলাম।
আবু মহসিন খানের লাশের পাশ থেকে পুলিশ একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করেছে। পুলিশ বলেছে, সেখানে তিনি লিখেছেন ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’