এই প্রস্তাব দিতেই পারেন না আবিগেইল বয়েড

আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ

কঙ্কা কনিষ্কা

“বাংলাদেশকে ম্যাগনিটস্কি স্টাইল স্যাংশন দেয়া উচিত অস্ট্রেলিয়া সরকারের” গত ২১ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে ‘অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনস’ দলের এমপি আবিগেইল বয়েড এমপির এমন প্রস্তাব জানার পরপরই কয়েক দফা প্রশ্ন তুলেছেন নামী কূটনিতিকরা।

 

প্রথমত তারা বলছেন, ম্যাগনিটস্কি স্টাইল স্যাংশন দেয়ার শুরু হয়েছিল একটি বিশেষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার  মধ্য দিয়ে। মূলত, ২০০৯ সালে রাশিয়ার কারাগারে নির্যাতনের শিকার হয়ে সের্গেই ম্যাগনিটস্কির নামে এক রুশ ট্যাক্স আইনজীবী হয়। মৃত্যুর পর ২০১২ সালে ম্যাগনিটস্কি আইন পাস করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে তারা এই  স্যাংশন দেয় ম্যাগনিটস্কির খুঁজে বের করা ৩৯ জন দুর্নীতিগ্রস্ত রাশিয়ানের ওপর। যারা ম্যাগনিটস্কির মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ছিল।

 

প্রাদেশিক সংসদে বাংলাদেশের উপর ম্যাগনিটস্কি স্টাইলে স্যাংশন আরোপের দাবি তোলার আগে, পূর্বে অস্ট্রেলিয়ান সরকার মাত্র একবার ২০২২ সালে এই স্যাংশনের প্রয়োগ করে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ম্যাগনিটস্কি স্টাইলে আবিগেইল বয়েড যে স্যাংশন আরোপ করতে বলেছেন সেটা কী আইনত অস্ট্রেলিয়ার সরকার দিতে পারে? কারণ অস্ট্রেলিয়াতেই তো বৈধ নয় ম্যাগনিটস্কি স্টাইল স্যাংশন।

 

একটু পেছনে ফিরে তারা বলেন, ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির এমপি মাইকেল ড্যানবি সংসদে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও দুর্নীতি (ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞা) বিল ২০১৮ উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে ২০১৯ সালে সংসদ ভেঙে দিয়ে বিলটি বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে ৮ ডিসেম্বর, অস্ট্রেলিয়ান সংসদ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন, গুরুতর দুর্নীতি এবং সুশাসন ও আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ণকারী কার্যকলাপের জন্য ম্যাগনিটস্কি স্টাইলের স্যাংশনের আইন আংশিকভাবে পাস করে।

 

যে আইন অস্ট্রেলিয়াতে সম্পূর্ণভাবে পাশই হলো না, সে আইনে কীভাবে আবিগেইল বয়েড স্যাংশন দাবি করলেন? কূটনীতিকরা বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুর মেলানো ছাড়া কিছুই নয়।

 

পরে আরও বলা হয়, প্রস্তাব উত্থাপনকারী আবিগেইল অস্ট্রেলিয়ার সংসদে কতোটুকু প্রভাব বিস্তার করেতে পারেন? তিনি তো অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক সংসদের সদস্য, মূল সংসদের নন। খোদ অস্ট্রেলিয়ান কর্মকর্তারা এব্যাপারে কথা বলার সময় বিষয়গুলো হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার এই মুহূর্তে এটা মানার কোনো যুক্তিই দেখছে না। কারণ এই আইনের আওতায় মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বড়ো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন প্রশাসন।

 

এ নিষেধাজ্ঞায় পড়লে ওই ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করা হবে এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। যুত্তরাষ্ট্রের পর কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বেশ কয়েকটি দেশ একই ধরনের আইন পাস করে।

 

তারা আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় যদি বাংলাদেশের ওপর ম্যাগনিটস্কি আইন প্রয়োগ করতে পারেও তাহলেও কী বাংলাদেশে সেই বাস্তবতা আছে? বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তো সৃষ্টি হয়নি যেখানে অস্ট্রেলিয়া ম্যাগনিটস্কি স্টাইলে স্যাংশন দেয়া যেতে পারে। এই দাবি উত্থাপনের পেছনে মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত উদ্বেগের চেয়ে ব্যাক্তি স্বার্থরক্ষাই মুখ্য মনে হচ্ছে।

 

ব্যক্তি বা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কারণ ম্যাগনিটস্কি স্টাইল স্যাংশন দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। এরই মধ্যে রাশিয়া, চীন ও ইরানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে ওয়াশিংটন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এখন্ও সেই পথে হাঁটবে না। কারণ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সরকারগুলির তুলনায় এক বৈচিত্র্যময় পার্লামেন্টের সূচনা করেছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর, ২০২২ সালের ২৩ মে অস্ট্রেলিয়ায় সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি।

 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন একটা অবান্তর দাবি তুললেন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আবিগেইল বয়েড? বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশে বিদেশের নানা অপপ্রচারের উদাহরণ টেনে কূটনীতিকরা বলছেন, এটাও বাংলাদেশ সরকারবিরোধী লবিস্টদেরদের সেই পুরোনো স্টাইল। আমেরিকা ব্রিটেন বা অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে কোন দলের ফান্ডে টাকা দিলেই তাদের দিয়ে অনেক কিছু বলিয়ে নেয়া যায়। এটা তাদের দেশে খুবই বৈধ বিষয়। আবিগেইল বয়েড একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভুদ আইনজীবী। বিদেশি লবিং প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত এরাই চালায়। সুতরাং তার পক্ষে গ্রিন দলে কিছু ফান্ড নেয়ার বিনিময়ে এরকম একটি প্রস্তাব তুললে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *