নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির নেতারা মাইক লাগিয়ে মিথ্যা কথা বলে। তারা সরকারের সব কিছু খাটো করে দেখার চেষ্টা করে, কারণ ওই দলের জন্মই অবৈধ উপায়ে। যারা টিকেই আছে মিথ্যা দিয়ে, যাদের শেকড় নেই।’ এজন্য বিএনপির মিথ্যা কথায় কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের বলতে শুনছি যে আমরা মেগা প্রজেক্ট করে ফেলেছি ঠিকই কিন্তু দরিদ্রদের জন্য কিছু করিনি। তাদেরকে আমি বলতে চাই- তারা বাংলাদেশ দেখেনি।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি জায়গায় তার সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষার অধীনে বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের দেশে ১০কোটি ৬১ লাখ ১৩ হাজার ৭৬৩জন উপকারভোগী রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে একেকজন একাধিক ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে। ভিজিএফ এর কাজ করা হচ্ছে যেনো সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়। আগে মৌসুমের ওপর নির্ভর করে সবজি হতো, এখন বারো মাসই পাওয়া যায়। কৃষিতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আজকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এর উপকারভোগী। খাদ্য ও অর্থ সাহা্য বলে জায়গায় আমরা ৩৩ লাখ উপকারভোগী দেখতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্যতে ২৮ লাখ উপকারভোগী, জিনিসের দাম বাড়লেই কম দাম দিয়ে খাবারের সুযোগ করে দিচ্ছি ওএমএস এর মাধ্যমে। এর উপকারভোগী ৪৫ লাখ মানুষ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৬৩ লাখ মানুষ। ২৪ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাকে ভাতা দেওয়া হয়। আগে প্রতিবন্ধিদের লুকিয়ে রাখতো অভিভাবকরা। সচেতনতা ছিলো না। সবদোষ মায়ের ওপরে গিয়ে পড়তো। এখন ২৪ লাখ উপকারভোগী। প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের আলাদা বৃত্তিরও ব্যবস্থা আছে।
সমালোচনাকারীদের মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইদেশে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। এইদেশ ছিলো গভর্নমেন্ট অফ দ্য আর্মি বাই দ্য আর্মি ফর দ্য জেনারেল। আমরা গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল প্রতিষ্ঠা করেছি। এরপর যখন দেশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে শুরু করেছে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে তখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে মাতামাতি কেনো। তখনই বলত হয়- সন্দেহ হয় রে। আসলে তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’
নিরাপত্তাদারকারীদের ওপর স্যাংশন দিবে আবার তাদের কাছে নিরাপত্তা চাইবেন এটা কেমন কথা সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিটার হাস যে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেন, আমেরিকার সরকার থেকে আমার অ্যাম্বাডেরকে কী নিরাপত্তা দেওয়া হয়? ব্যক্তিগতভাবে তাদের কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হয় না সেখানে। অথচ এখানে দূতাবাসে ১৫৮জন পুলিশ নিয়োগ দেওয়া আছে। তার নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলে আসছি, ভোটের জন্য আমরা নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে দিয়েছি। আমিতো এমন না যে নতুন আসছি। স্কুল জীবন থেকে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এই জায়গায় এসেছি। আওয়ামীলীগকে ভোট চুরি করা লাগে না, জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবেই তাদের ভোট দেয়। কারণ তারা জানে নৌকায় ভোট দিলে জীবনমান উন্নত হয়েছে। দারিদ্র বিমোচন কাদের সময় হয়েছে? এটা এইদেশে এনজিও বা কারোর মাধ্যমে হয়নি। এমনকি ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমেও হয়নি।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি সবুজ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন এবং “লস এন্ড ড্যামেজ” ফান্ডকে কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি। জেইক সুলিভান নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মতো সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আবারও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।’