১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ৩ ভাগের মতো । ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে বেকারত্বের হার গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় চার ভাগের উপরে । ২০০৪ ,২০০৫ এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই গ্রাফ ছিল নিম্নগামী । ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালে বেকারত্ব গিয়ে ঠেকল ৫ ভাগে । ২০০৯ থেকে ২০১০ সালে এই হার আবার কমে আসলো । ২০১০ সালের পর আবার ২০২০ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে দেখা যায় এই গ্রাফ উর্ধমুখী । ২০২০ সালে বাংলাদেশে বেকারত্ব ছিল ৪.১৯ ভাগ । বাংলাদেশে বর্তমানেবেকার হচ্ছে প্রায় আড়াই মিলিয়নের মতো ( মার্চ ২৫ , ২০২০ , ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস) । এখন দেখা যাক এই বেকার ছেলেমেয়ে মূলত কারা ?
ইয়াং জেনারেশনের একটা বড় অংশ আছে যারা ভোর চারটায় ঘুমোতে যায় ,আর পরদিন বারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠে । দুপুরের দিকে পিসিতে বসে ডিপ্রেশনের স্ট্যাটাস দেয় । আর বিকেল বেলা বিড়ি খাওয়ার জন্য বাইরে যায় । রাতের বেলা ফিরে ফেসবুকিং আর “”আইজ প্রত্তম ঘুরতে গেলাম “” টাইপ পোস্ট । নিজের জবের খবর নাই । আর কারো জব দেখলেই মন্তব্য ঃঃ ওর ভালো লিঙ্ক আছে “” ।
২৭-২৮ বছর বয়সী ছেলেদের একটা গ্রুপ আছে ।
এরা এখন থেকেই নিজেকে বিলগেটস বা ওয়ারেন বাফেট মনে করে । ইউনিভার্সিটি লাইফে যে ছেলে ৮ টাকার সিগার খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে নাই আজকে সে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে । স্বপ্ন দেখায় মানা নাই । কিন্তু নিজের মধ্যে পরিবর্তন না এলে কাজ হবে ?
একদল নিজেদেরকে মনে করে কোচিং মাস্টার ।
ছেলেমেয়েদের ভালো কিছু শেখাতে গেলে সেটা এপ্রিশিয়েট করি । কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সেটা হয় না । তিনবার বিসিএস ফেইল করে এখন লিখে বই । কিভাবে প্রিলির প্রশ্ন কমন পাওয়া যায় ,কিভাবে অপশন মিলিয়ে উত্তর করা যায় ,আইবিএ কবে প্রশ্ন করবে , বিবিএ কবে উত্তর দিবে এই হইলো কাজকর্ম ।
অন্যদল গায়ে তুলে নিয়েছে পাঞ্জাবী । হলুদ পাঞ্জাবী । তারা নিজেকে হিমু মনে করা শুরু করেছে । রাত বিরেতে এখানে ওখানে চলে যায় । আড্ডা মারে । কিছু বললেই সাহিত্য ঝারে । অথচ বাসায় থাকা অসুস্থ বাপটা সাহিত্য বোঝে না । বাপের কাছে প্রয়োজন মানে প্রয়োজন । অন্য কিছু না । বিদেশে যাওয়ার জন্য একটা গ্রুপ সবসময় উন্মুখ । এপ্রিশিয়েট করি । কিন্তু দুই দিন পর পর ট্র্যাক চেঞ্জ করলে হবে ?
আরেকটা গ্রুপ খেলা আর সিনেমা নিয়ে আছে । দিনের বেলা সিনেমা দেখে রাতে পোস্ট দেয় । খেলা দেখার জন্য চোখের পানি ফেলে । এটা ভালো । কিন্তু নিজের কাজ বাদ দিয়ে এগুলো কি খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয় ? আরেকদল পাবেন ,এরা কোন জবেই স্যাটেল না । এদেরকে জব অফার দেন ,এরা নাক সিটকাবে । এইটা কোন বেতন হইলো — বলে যে জব দিয়েছে তাকেই মারবে । অথচ হাতে নাই ফুটা পয়সা । ইউনিভার্সিটিতে করতো পলিটিক্স । এরপর পড়াশুনা কমপ্লিট করতে না পেরে ড্রপ আউট । এখন এলাকার পলিটিক্সে নজর দিয়ে পাতি গুন্ডা হওয়ার চেষ্টা । শুনতে খারাপ লাগবে । এরপরেও বলি ।
আপনার বয়সী একজন জাপানী বা ইরানী তরুন যে ধরনের পরিশ্রম করে , যে মানের এসাইনমেন্ট নিয়ে কাজ করে , যে ধরনের হাইপোথিসিস দেয় আপনি সেগুলোর ধারে কাছেও না । দেশপ্রেম আপনার আমার থেকে তাদের কম না ।
তারাও দেশের জন্য পলিটিক্স করে । দেশের জন্য তারাও কাজ করে । পার্থক্য হইলো তারা সুযোগ পেলেই অটো পাশের জন্য আন্দোলন করে না । তারা সিভিল সার্ভিস করতেই হবে বলে মাথা ফাটায় না ।
একটা বেকার ছেলেকে কম্পিউটারের দোকান ধরিয়ে দিয়ে টাইপের কাজ করতে বলেন ।। তার শরম লাগবে । সে করতে চাইবে না । কারন সে মাস্টার্স পাস । অথচ তাকে মিথিলার ছাদে আড্ডা দিতে বলেন , সে সানন্দে রাজি হবে । প্রবাসীর স্ত্রীর বাজারটা করতে দিতে বলেন , সে খুশি হয়ে করবে । আজকে তাকে সুপারশপে পার্ট টাইম জবের অফার দেন । আপনার দিকে তেড়ে আসবে । আমি শালা পাব্লিকে পড়েছি ,এত্তো বড় কথা বলিস ? নিজের সিভিটা ভালো মতো লিখতে দেন । পারবে না ।
অন্যের পজিশন নিয়ে সমালোচনা করতে বলুন । দেখবেন সানন্দে কাজটা করে দেবে । তাকে বড় ভাইয়ের তোষামোদি করতে বলুন , সে রাজি হয়ে যাবে । জি ,হ্যা পার্থক্য ঠিক এখানেই । বেকার সমস্যা বাংলাদেশে আছে । তবে মানসিক ভাবে বেকার হয়ে থাকার প্রবণতাও কম না ।