ইসরায়েলে ভ্যাক্সিন নিয়ে ১০ জনের মুখ বাঁকা হয়ে গেছে

অজানা রহস্য আন্তর্জাতিক দিনকাল
ইসরায়েলে ভ্যাক্সিন নিয়ে ১০ জনের মুখ বাঁকা হয়ে গেছে, জার্মানিতে ৭ জন, নরওয়েতে ১৯ জন মারা গেছে – বাবারে বাবা, কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! কাজেই ভ্যাক্সিন নেওয়া যাবে না! কী দারুণ লজিক, তাই না?
লজিকের সমস্যাটা দেখেন। ইসরায়েলে ১০ জনের মুখ বাঁকা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা ২০ লাখ মানুষ ভ্যক্সিন নেওয়ার পর। এখন এই ২০ লাখ মানুষ যদি একেবারেই ভ্যক্সিন না নিত, তাহলে আগামী কয়েক মাসে তাদের মধ্যে আক্রান্ত হতে পারত মিনিমাম ৫% বা ১ লাখ মানুষ। এই আক্রান্তদের মধ্যে মারা যেত মিনিমাম ১% বা ১০০০ মানুষ।

 

এখন আপনার কাছে ১০০০ মানুষের মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক মনে হয়, কিন্তু ১০ জনের মুখ বাঁকা (সেটাও মাইল্ড, অলরেডি সেরে গেছে বলে রিপোর্ট এসেছে) হয়ে যাওয়াকে খুব আতঙ্কজনক মনে হচ্ছে, আর তারপরেও আপনি নিজেকে মনে করছেন খুবই বুদ্ধিমান? দ্বিতীয়বার ভাবেন।

 

এমনিতেই যেকোনো ধরনের ড্রাগে কিছু সাইড ইফেক্ট থাকেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভ্যাক্সিন নিলে কিছু মানুষের সাইড ইফেক্ট তো হবেই। সেটা কত পার্সেন্ট, সেটা দেখতে হবে। পত্রিকার শিরোনাম দেখে বাবারে বলে চিৎকার দেওয়ার কোনো অর্থ নাই। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে যত মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছে, সেই তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা একেবারেই নগন্য।
এই মৃত্যুগুলোও ঠিক সাইড ইফেক্টের কারণেই হয়েছে কিনা, সেটাও এখনও প্রমাণিত না। যেহেতু মৃত্যু ঘটেছে, তাই পত্রিকায় নিউজ চলে এসেছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, সেটা তো তদন্ত সাপেক্ষ! ভ্যাক্সিন কোনোটাই তো পুরোপুরি কার্যকর না। যদি ৯০% ইফেক্টিভ হয়, তার মানে হচ্ছে বাকি ১০% মানুষের উপর এটা কাজ করবে না। সেই ১০% মানুষের মধ্যে যদি ০.১% মানুষেরও সিরিয়াস কোনো রোগ থেকে থাকে, তাহলেও তো এই পরিমাণ মৃত্যু ঘটতে পারে!

 

বলছি না যে সাইড ইফেক্ট নাই। সাইড ইফেক্ট কিছু থাকারই কথা। ব্যবসায়িক কারণে তাড়াহুড়া করায় এবার সেই ঝুঁকিটা আরও বেশি। কিন্তু একই কোম্পানির ভ্যাক্সিন যখন ইসরায়েলি নাগরিকরাও নেয়, তখন সেই একই ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে আপনি যদি কন্সপিরেসি ছড়ান, সেটা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

 

সাবধান হওয়ার দরকার আছে, কিন্তু শুধু শিরোনাম পড়ে গুজব ছড়ানোর মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নাই। রয়টার্সের যে রিপোর্টটা ভাইরাল হয়েছে, সেটা ভেতরে ঢুকে পড়লে দেখবেন ভারত নিজেদের তৈরি অন্য একটা ভ্যাক্সিনের কয়েক হাজার ডোজ বাংলাদেশীদের উপর ট্রায়াল দেওয়ার অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো অনুমতি পায় নি।

 

কিন্তু রয়টার্সের ঐ রিপোর্টেই বলা আছে, বাংলাদেশীদেরকে দেওয়ার জন্য যে ২০ লাখ ডোজ ভারত থেকে আসছে, সেটা ট্রায়ালেরটার চেয়ে ভিন্ন। সেটা ভারতে প্রস্তুতকৃত, কিন্তু অক্সফোর্ড থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। অর্থাৎ সেটা মূলত অক্সফোর্ডেরই ভ্যাক্সিন, জাস্ট মেড ইন ইন্ডিয়া।

 

আপনি সারাদিন মুফতি ইব্রাহিমকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন, এরপর নিজেই সংবাদের শুধু শিরোনাম পড়ে, বেসিক হিসেব না করে আতঙ্ক ছড়াবেন, তাহলে আপনি কোন দিক থেকে বেটার? আপনি তো শিক্ষিত মুফতি ইব্রাহিম! মুফতি ইব্রাহিম তো তাও লক্ষ লক্ষ ভিউ পায়, সামনের দর্শকদের কাছ থেকে সুবহানাল্লাহ পায়, আপনি তো সেটাও পান না। আপনার অবস্থা তো আরও শোচনীয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *