এটাই সায়েন্স

অবাক করা ‘এটাই সায়েন্স’ উপায়ে দধি সৃষ্টি

অজানা রহস্য বিনোদন
জানেনইতো, দুধকে দৈয়ে পরিনত করে যে জীব তারা কিছু ধরনের ব্যাকটেরিয়া। বন্ধু সুমন তার ব্যাচেলর পরবর্তী গবেষণায় দৈ তৈরির সবচেয়ে ভালো ব্যাকটেরিয়া প্রজাতিকে খুঁজেছিলো। দুধভর্তি টেস্টটিউব হাতে দেখতাম ঘোরাঘুরি করতো। কোন কোন ব্যাকটেরিয়া অতি বদখত দৈ বানাতো, কোন কোন ব্যাকটেরিয়া খুবই ভালো বানাতো। স্বাদ সে পরীক্ষা করেছে কিনা আমি জানিনা। তবে দৈয়ের ঘণত্ব, রঙ, গন্ধ ইত্যাদি পরীক্ষা করতো বলে জানি।
বিদেশে থাকার একটা সুবিধা হইলো বিভিন্ন ধরনের জিনিস দোকানে পাওয়া যায় যা বাংলাদেশে পাইতাম না (উল্টা ক্ষেত্রে খারাপ জিনিসও মনে করতে পারেন)। এখানের ঔষধের দোকানগুলোতে প্রেসক্রিপশান ছাড়া একধরনের বড়ি পাওয়া যায়। এদের নাম প্রোবায়োটিক ঔষধ। ব্যাপারটা আসলে কিছুই না, কয়েকধরনের ব্যাকটেরিয়াকে মিশিয়ে পাউডার বানায়ে ক্যাপসুলে পুরে দেয়া। আমাদের পাকস্থালী তথা পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে বলে দাবি আছে এরকম ব্যাকটেরিয়াগুলার। এরা সাধারণত আমাদের পাকস্থলীতেই পাওয়া যায়, সঠিক ভারসাম্য মাঝেমধ্যে থাকেনা যদিও। তখন প্রোবায়োটিক বড়ি খাওয়াটা অনেকে পরামর্শ দেন। যাই হোক, একেকটা ক্যাপসুলে এরকম একটা ব্যাকটেরিয়ার তালিকা থাকে –
Lactobacillus salivarius
Lactobacillus acidophilus
Lactobacillus casei
Lactobacillus rhamnosus
Bifidobacterium longum
Bifidobacterium lactis
Bifidobacterium bifidum
Streptococcus thermophilus
পুষ্টিবিজ্ঞান যারা পড়েন তারা একদম চোখ বড় করে ফেলবেন এই তালিকা দেখে। এদের অনেকগুলাই আমরা ব্যবহার করি দৈ তৈরিতে। দুধে থাকা ল্যাকটোজকে ভেঙে ল্যাকটিক এসিডে পরিণত করে বলে দুধের পিএইচ কমে যায়, যার ফলে দুধে থাকা প্রোটিনগুলি জমাট বাঁধে। এটাকেই আমরা দৈ বলি। সাথে একটু মিষ্টি মিশিয়ে দিলে তো কথাই নাই, মিষ্টি দৈ। তবে অতি সুস্বাদু বগুড়ার বিখ্যাত দৈ কোন কোন ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রণে তৈরি আমি জানিনা, কেউ খুঁজে দেখতে পারেন। ব্যাকটেরিয়ার ধরনে দৈয়ের গুণমান বিভিন্ন হইতে পারে। কোন দুধ ব্যবহার করছেন সেটার ওপরও নির্ভর করে। যাই হোক, প্যাঁচাল বাদ দিয়ে আমার তরিকায় ফেরত আসি।
ঔষধের দোকান থেকে এক প্যাকেট ক্যাপসুল কিনে আনি। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘণ করি, চিনি মিশাই, অল্প ক্রিম মিশাই। ঠান্ডাতর হলে, কিন্তু তখনও কিছুটা উষ্ণ থাকা অবস্থায় ২/৩ টা ক্যাপসুল খুলে ভেতরের পাউডার দুধে দিয়ে দেই। গরম অবস্থায় দেয়া যাবেনা, ব্যাকটেরিয়া মরে যাবে। ব্যাকটেরিয়া দেয়ার পরে ঘুটা দেই। তারপর চুলা অল্পগরম রেখে সেখানে রেখে দেই। ৩/৪ ঘন্টায় দই হয়ে যাবে। একদম সুচারু দৈনির্মাতার মতো স্বাদের না হলেও খারাপ হয়না। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। আপনিও বানান!
একবার মানুষজনকে দৈ খাওয়ানোর পরে যখন বলসি এই উপায়ে বানাইসি তখন লোকজন আমার বানানো আর কিছু খাবেনা প্রতিজ্ঞা করসে। যদিও একই ব্যাকটেরিয়া এরা দাম দিয়ে দৈ কিনে খাবে। ফালতু।
যাই হোক, আপনার সন্তানদের জন্য একটা ঘরপরীক্ষা হিসেবে এইটা দেখাতে পারেন। মজা পাবে। বলে রাখা ভালো, যাদের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া খেতে ঝামেলা, অক্র বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দৈ খেতে ঝামেলা তারা না খাওয়াই ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *