নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির খুব বেশি লাভ হয়নি, তেমনি কয়েক মাস আন্দেলন করে এক পর্যায়ে তারা ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের তেমন সুযোগ থাকে না। ফলে বিএনপিকে আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও দেশের এত মানুষের সমর্থন নিয়ে বিএনপি যে জনপ্রিয় দল তা প্রমাণে নির্বাচন ছাড়া অন্য তো কোনো পথ খোলা নেই। তাহলে বর্জন করে আন্দোলন করলে লাভ কী? একটি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের তেমন সুযোগ থাকে না। ফলে বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে আরও পাঁচ বছর। ”
মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “এদেশের মানুষ ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন’ চায় সে আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে বিদেশিদের কথায়। কিন্তু তারা কোনো দলকে এনে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় টিকে যায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর টানা কয়েক মাস বিএনপি অবরোধের কর্মসূচি পালন করার পর এক পর্যায়ে সেটি ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয় এবং সে নির্বাচনে দলটির সাতজন এমপি সংসদেও ছিলেন।
কয়েক বছরের বিরতির পর ২০২২ সালের অক্টোবরে দেশের সব কয়টি বিভাগে টানা বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি করে। এবার বেশ আগে থেকেই আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছিল। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ইস্যুতে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে সরকারের ওপর, যা বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে আশা সঞ্চার করে।
২০২৩ সালের ২৮শে অক্টোবরের পর সে পরিস্থিতি বদলে যায়। ওইদিন বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ঢাকায় জড়ো হয়েছিল। কিন্তু সংঘাত শুরুর পর পুলিশ এক পর্যায়ে তাদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়। এরপর দলটির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই একে একে গ্রেফতার হন, কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যান।
নির্বাচনের আগে ও পরে মোট ৭৪ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১১ই জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা খুলে প্রবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে দলটির নির্বাচন বর্জন থেকে ঠিক কী অর্জন হয়েছে, তা নিয়ে দলটির ভেতরে এবং বাইরে নানা প্রশ্ন আছে।
নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একটা সময় কূটনীতিতে কাউকে কাউকে জোর করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয় ছিলও। এখন তো আর সেই যুগ নাই। যেখানে আন্দোলন করে নির্বাচন বন্ধ করা যায়নি, সেখানে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন কীভাবে সম্ভব?”