দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকার

দিনকাল বাংলাদেশ

মো. আব্দুল হালিম

একটি জাতির সামগ্রিক সত্তার পরিচয় তার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়। সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে একটি জাতি জাতীয় ও বিশ্ব দরবারে নিজের অবস্থান তৈরি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি আজ বিশ্বের দরবারে তার স্বকীয় উন্নত সংস্কৃতির মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বলিষ্ঠ ও সৃজনশীল নেতৃত্বে।

 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আপামর বাঙালি তাঁর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করেছে । এক্ষেত্রেও অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতিগত আবেগ। এই সফল্য আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, সাঁওতাল বিদ্রোহ, এমনকি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মতো জীবন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার ফল। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়েছে জাতির পিতার আদর্শে তথা মুজিবীয় ভাবধারায়। এই আদর্শ অনুসরণ করে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে, কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক জনপদ পর্যন্ত সংস্কৃতিচর্চার একটি উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

 

সরকারের হাত ধরে বাংলাদেশ আজ জীবনযাত্রার নব নব অভিযাত্রায় উন্নতির জোয়ারে ভাসছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষের  দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান্নোয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনীতিচর্চা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পূরণ সম্ভব হয়েছে। রাস্তাঘাট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও সোলার পোঁছে দেওয়া, ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় পর্যায়কে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে।

 

বাংলাদেশ এমডিজির লক্ষ্য সফলভাবে পূরণ করে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এসডিজির লক্ষ্য পূরণের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি বারবার আস্থা রেখেছে। মানুষের সেই আস্থার প্রমাণ দেখি দেশে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিয়ে বারবার আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালে জাতির পিতার নেতৃত্বের প্রতি ভরসা রেখে বাঙালি স্বাধীনতা লাভ করেছে, তেমনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি দেশের জনগণের বারবার আস্থা রাখার ফল আমরা পাচ্ছি।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির পাশাপাশি সংস্কৃতিগতভাবে এগিয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংস্কৃতিগত পদক্ষেপ নতুন প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করছে। দেশে প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে জনগণের মধ্যে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি এদেশের জনগণ বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমণ্ডলেও পরিচিত করে তুলছে। এই সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের পরিবেশ সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে। শেখ হাসিনার সরকার বাঙালি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি , মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক কাজ সংরক্ষণ করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে প্রযুক্তি যুক্ত করে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন ও নিজস্ব সংস্কৃতিতে বলীয়ান শিক্ষিত জাতি হিসেবে আমাদের গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছে।

 

আমাদের দেশে তৃণমূল পর্যায়ে অসংখ্য প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার তৃণমূলের সেই প্রতিভা জাতীয় পর্যায়ে প্রকৃত পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে বিকাশের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য অসাম্প্রদায়িক চেতনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে দেশে প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ হচ্ছে। জ্ঞানচর্চার জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, শিল্প-সাহিত্যচর্চার প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টি, গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে দেশ আজ রুচিশীলতার আলো ছড়াচ্ছে। আজ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সংস্কৃতবান আলোকিত মানুষ তৈরির প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগ সরকার শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা কিংবা প্রযুক্তিগত উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে তা নয়, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে নানারকম পদক্ষেপ হাতে নিয়ে তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজ লক্ষ্য করলে তার প্রমাণ মেলে। যেমন- জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, চারু-কারু এবং ললিত কলার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন; প্রত্নতত্ত্ব, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য; জাতীয় গ্রন্থাগার/গণগ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও প্রবর্ধন; জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলার প্রচলনে সহায়তা; জাতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং চারুকলার বিকাশ ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান; শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান; বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সাথে চুক্তি সম্পাদন ও সাংস্কৃতিক ভাবের আদান-প্রদান; পল্লি সাহিত্য, পল্লি সংস্কৃতি ও পল্লি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা; শিল্পী, লেখক কিংবা সাহিত্যিকদের পেনশন প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সরকার এরইমধ্যে প্রায় ১৮৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১ টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং  বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে  ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ব্যাপক ইতিবাচক বিবর্তন এনেছে। আজ গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় গ্রাম ও শহরে মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে গ্রামের মানুষ হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্যপালন ও কৃষিজাত দ্রব্য খুব দ্রুত দেশের সর্বত্র পাঠাতে পারছে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি জাতীয় পর্যায়ে নিজের অবস্থান শক্ত করে তুলেছে। এছাড়াও গ্রামে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম অর্জন।

 

একটি দেশে মাঝে মাঝে এক শ্রেণির অপশক্তির দ্বারা জাতীয় সংস্কৃতি আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ধরনের অপশক্তি দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চায়। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পাকিস্তানি-বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালি সংস্কৃতির উপর চরম আঘাত  করে। পাকিস্তানিরা তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও বাংলাদেশকে সংস্কৃতিগতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালি সংস্কৃতিকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলো সেই অপশক্তি। কিন্তু মুজিবীয় আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনার ধারক ও বাহক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব-পরিমণ্ডলে প্রতিনিয়ত পরিচিত করে তুলছে।

 

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির একটি অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্ব অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে’ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার সেই বক্তব্যকে প্রতিনিয়ত বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ‘ আমি বিশ্বাস করি জাতির পিতার সাংস্কৃতিক দর্শন প্রতিষ্ঠা করা আমাদের কর্তব্য’দেশের জনগণ বর্তমানে যে উন্নতির স্বাদ পাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে নিজের জায়গা করে নিয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে।

 

আসন্ন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণ বরাবরের মতো শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আস্থা রাখবে নিঃসন্দেহে। কেননা, বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার আদর্শ, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। সুতরাং বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোয়ার ও জাতির পিতার সাংস্কৃতিক দর্শনকে সমুন্নত রাখতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের সামষ্টিক ইতিবাচক স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।

 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *