ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আড়ালে কী চলছে?

দিনকাল বাংলাদেশ

বিপ্লব কুমার পাল

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি সংগঠন নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। যাদের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রশ্নে নেতিবাচক বিশ্লেষণ প্রকাশই প্রধান উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সংগঠন বিভিন্ন ফান্ডের মাধ্যমে নিজেদের এজেন্ডা জনসম্মমুখে তুলে ধরে সরকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচক ইমেজ তৈরির কাজ করে। বিশেষত নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা বৃদ্ধিবৃত্তিকভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বিছায়।

 

সম্প্রতি ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এর এক ওয়েবনিয়ারে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে তৎপরতা সেটি হস্তক্ষেপ নয়। আরও বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত নিশ্চুপ। কিন্তু লক্ষ্য করা যায় যে, ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবনিয়ার থেকে ভুল বার্তা প্রদান করা হচ্ছে। আবার তাদের ওয়েবসাইটেই ভিন্ন একটি সাক্ষাতকারে তাদেরই থিঙ্কট্যাঙ্ক আলী রিয়াজ বলছেন, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় ভারতের গণমাধ্যমে যথেষ্ট কথাবার্তা হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক একে ভারতের জন্য গুরুতর সংকট হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু ভারত কি অন্য কোনো দেশের বেলায় এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়? এটা একদিকে বিস্ময়ের ব্যাপার, অন্যদিকে বোঝা যায় তারা বাংলাদেশকে কীভাবে বিবেচনা করে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, বাংলাদেশে কোনো দল বা ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতের কাজ করা উচিত। তাঁরা কিন্তু বলছেন না, বাংলাদেশের মানুষ যেন সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে।’

 

যে ওয়েবিনারের কথা হচ্ছিলো সেখানে আয়োজক এবং বক্তাদের মধ্যে ছিলেন মনির হায়দার, শ্রীরাধা দত্ত, বদিউল আলম মজুমদার, এম হুমায়ুন কবির এবং আলী রিয়াজ। আলী রিয়াজ ও বদিউল আলম মজুমদার দীর্ঘদিন ধরেই সুশীলতার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ আছে।

 

কে এই আলী রিয়াজ

আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার প্রধান লবিস্ট হলেন ড. আলী রিয়াজ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ থেকে ২০১৯সাল – এ সাত বছরে পুলিশের গুলিতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ৭ হাজার ৬৬৬।  আলী রিয়াজ  মানবাধিকারের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সরব থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড নিয়ে টু পর্যন্ত শব্দ করেন না। খালেদা জিয়ার সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মুশফিক ফজল আনসারী ও বাংলাদেশবিরোধী সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলামের সাথে জোট বেধে কাজ করেন আলী রিয়াজ। একটু পিছনে ফিরলে দেখা যাবে এই উইলিয়াম বি মাইলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধেও কাজ করেছিলেন ।

 

ফোরাম নিজেদের সম্পর্কে কী বলে?

এটি বাংলাদেশ অধ্যয়ন এর সাথে সম্পৃক্ত একাডেমিক, বিশ্লেষক এবং গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম। এই ফোরাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত সমসাময়িক বিষয়ের ওপর গবেষণা, মতামত এবং নীতি-নির্ধারণ মূলক আলোচনার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। গবেষণামূলক অধ্যয়নের ভিত্তিতে ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, রাষ্ট্রীয় নীতি নিরীক্ষা করে এবং বাংলাদেশের সঙ্কট ও সম্ভাবনাকে উন্মোচন করে এমন প্রবন্ধ/নিবন্ধ এই ফোরাম প্রকাশ ও প্রচার করবে। এই ফোরাম বাংলাদেশ বিষয়ক পঠন-পাঠনসহ বৈশ্বিক মঞ্চে এর ভূমিকা তুলে ধরার লক্ষ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ে আগ্রহী গবেষকদের কাছ থেকে বিশ্লেষণধর্মী লেখা আহবান করে।

 

ফোরাম নিজেদের সম্পর্কে যা বলে না?

তাদের লেখা ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যে গবেষণা নিবন্ধ প্রবন্ধ প্রকাশের কথা তারা বলে থাকেন তার কোনটিই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক নয়। যেকোন ইস্যুকে নেতিবাচকভাবে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা করে। তারা এটা কোথাও উল্লেখ করে না যে,  বিএনপি জামায়াতের ছায়া-মুখপাত্র হিসেবে তারা ইস্যু নির্বাচন করে ও ব্যাখ্যা করে। ওয়েবসাইটে একটি লেখা আছে- সরকারকেই আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। সেখানে আলী রিয়াজ বলছেন, মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে আসার পথ দুটি। আলোচনা ও রাজপথ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার একটা পথ বের করতে হবে। প্রথমত, সরকারের দিক থেকেই এই উদ্যোগ আসতে হবে। তবে আমরা এখনো সে লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। দেখতে হবে, সংকট যে আছে, সরকার তা স্বীকার করে কি না। গত দুটি নির্বাচনে যে অবস্থা ছিল, সরকার সে অবস্থান থেকে সরতে চায় কি না। বড় দল বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায় কি না। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।” তার লেখার এই অংশ থেকেই বুঝতে পারবেন, তাদের টোন সরকারের করণীয় নির্ধারণে। এখানে বিরোধী পক্ষের কোন করণীয় তারা খুঁজে পান না।

 

এই ফোরাম থেকে নির্বাচন নিয়ে কী বলা হচ্ছে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদ চর্চা এবং দশ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালানের কথা অভিহিত করেন বলে গণমাধ্যম থেকে জানা যায়। তিনি যে বিএনপি-জামাত জোটকে ক্ষমতায় দেখতে চান না সেটি স্পষ্ট। অর্থাৎ বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগেই ভরসা করছে ভারত ।

 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিজেপির আমন্ত্রণে তিন দিনের ভারত সফর সফলভাবে সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী হবে। একইসাথে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত । সর্বশেষ জি২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পঞ্চবটীতে রাজকীয় আপ্যায়ন করান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসাথে জি২০ সম্মেলনের প্রতিটি সভাতে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা বিশ্বনেতাদের সাথে আলাদাভাবে বৈঠকের সুযোগ প্রদান করা হয় ।

 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *