শেষ সঞ্চয়ে ধাক্কা আসছে ! কঠোর শাটডাউনে বিপদের মুখে মধ্যবিত্তরা !

শেষ সঞ্চয়ে ধাক্কা আসছে ! কঠোর শাটডাউনে বিপদের মুখে মধ্যবিত্তরা !

আন্তর্জাতিক দিনকাল বাংলাদেশ
যমুনা ওয়েব ডেস্কঃ একবছরের বেশী সময় পার হয়ে গেছে । এখনও করোনা পরিস্থিতি বিশ্বের কোন দেশ সেভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি । বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশে অতিমারি করোনা মোকাবিলা করতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভ্যাক্সিনেশন করা এক কথায় অসম্ভব। সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার পাশাপাশি কঠোরভাবে বারবার লকডাউন কিম্বা শাটডাউনের পথে হাঁটতে বাধ্য হতে হচ্ছে সরকারকে । কিন্তু এই জাঁতাকলে পড়ে সবচেয়ে সঙ্গিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের । শেষ সঞ্চয়ে হাত পড়ায় আগামী দিনে বিপদের মুখে পড়তে চলেছে তারা ।
করোনার প্রথম ঢেউ সামলাতে না সামলাতে ফের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, এরপর আবার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। এই অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একের পর এক নানা বিধি নিষেধ জারি করা হচ্ছে । এদিকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি এবং ভ্যাক্সিনেশনে হোঁচট ! এই দুইয়ে মিলিয়ে গত এপ্রিল থেকে বিধি-নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে হচ্ছে জনগণকে । বর্তমান পরিস্থিতিতে  সংক্রমণ রোধে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে  জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হতে পারবে না। এখনও নিশ্চিতভাবে কেউ জানে না, নতুন লকডাউন কত দিন স্থায়ী হবে । ফলে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। কারণ শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখা সঞ্চয়ে আবার আঘাত আসছে।
দেশে কম আয়ের মানুষের জন্য সরকারী এবং বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে সহায়তা আসছে । কিন্তু, মধ্যবিত্তের জন্য সে সবের বালাই নেই । এদিকে কোথাও গিয়ে হাত পাতা ! সেটি মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । এই অবস্থায় যদি লকডাউন দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সত্যি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে । অনেকেই আছেন, গত ঢেউয়ের সময় চাকরি হারিয়েছেন । তাদের নিদারুন কষ্টে দিন কাটছে । কষ্টের মধ্যেও মনের মধ্যে একটা সান্ত্বনা হয়ত ছিল, করোনা নিয়ন্ত্রনে এলে ফের চাকরি ফেরত পাবেন । কিন্তু আবার লকডাউন শুরু হওয়ায় সেই আশাও শেষ হয়ে গেল।
মধ্যবিত্ত পরিবারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, উপার্জনক্ষম মানুষ একজন থাকে । তিনি যদি বসে যান, সমস্যা সত্যিই দুয়ারে এসে কড়া নাড়বে । দেখা গেছে, একদিকে চাকরি হারিয়ে অনেকেই দিশেহারা, আবার নতুন করে নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষিত বেকার বাড়ছে । ফলে করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে নতুন করে বেকার হওয়াদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কর্মহীনদের সংখ্যাও কম নয়। এই দুইয়ে মিলে দেশে বেকারের সংখ্যা যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছেন (২৭.৩৯%)।
এদিকে, ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার তথ্য বলছে. করোনা মহামারিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরে ৭৭ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক আয় কমেছে এবং ৩৪ শতাংশ । পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এ সময়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ৬২ শতাংশ কমে গেছে, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
গবেষণার ফলে যে তথ্য উঠে আসছে সেটি বিশ্লেষণ করলে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ৬১ শতাংশেরই অন্তত একজন সদস্য করোনা দুর্যোগের কারণে চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। আবার আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের  প্রায় ৭৭ শতাংশ, যারা গ্রামাঞ্চল বা মফস্বল শহরে ফিরে এসেছেন, তারা মনে করে কাজ বা চাকরি খুঁজে পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দেখা গেছে, আয় কমে যাওয়ায় পড়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ নিজেদের খাবারের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়েছে । অনেকের ঋণ বেড়েছে । কেউ বা নিজেদের সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *